মামা-ভাগ্নে: কালো কুকুর



আজকে বাসায় এসে দেখলাম ভাগ্নে একটা কালো কুকুরকে খাওয়াচ্ছে। ভাগ্নেকে ডেকে বললাম, এই কুকুর বাসায় রাখা যাবেনা। কালো কুকুর যেই বাড়িতে থাকে সেই বাড়িতে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেনা। ভাগ্নে বলল, আচ্ছা মামা তুমি কি ফেরেশতাদের চোখের গঠন সম্পর্কে জানো? আমি বললাম, মানে?


"মানে খুবই সহজ। কালো রঙের বস্তু দৃশ্যমান বর্ণালীর সকল কম্পাঙ্কের আলো শোষণ করে নেয়, তাই কালোকে আমরা কালো দেখি। আবার সাদা রঙের বস্তু দৃশ্যমান বর্ণালীর সকল আলো প্রতিফলনের মাধ্যমে আমাদের চোখে পাঠায়। তাই সাদা জিনিসকে আমরা সাদা দেখি। এখন তুমি আমাকে বলো, সাত আসমানের উপরে যেই স্থান সৌরজগত থেকে অনেক অনেক দূরে, সেখানে সূর্যের আলোর সাতটি রঙ থাকা সম্ভব নয় বললেই চলে। তাই পৃথিবীতে যেটাকে কালো বলে মনে হয়, সেখানে সেটাকে কালো মনে নাও হতে পারে। আবার প্রাণীর চোখের গঠনের উপরও রঙের তারতম্য হয়।


যেমন হরিণ কমলা রঙ দেখতে পায়না। হাতি লাল সবুজের পার্থক্য বোঝেনা। মানুষের চোখে 'রড' এবং 'কোন' নামে দুইধরণের ফটোরিসিপ্টর কোষ আছে। মানুষের রেটিনায় তিন ধরণের 'কোন' কোষ আছে। এই তিন ধরণের 'কোন' কোষ তিন ধরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোতে রেসপন্স করে। যার কারণে আমরা বিভিন্ন রঙ দেখতে পাই। বিভিন্ন প্রাণীর চোখের এই 'কোন' কোষের পার্থক্যের কারণে অনেক প্রাণী অনেক রঙ দেখতে পায়না। এখন তুমি বলো পৃথিবীর বাইরের কেউ, যার চোখের গঠন সম্পর্কে তোমার কোন আইডিয়াই নেই, সেই ফেরেশতারা কালো কুকুরকে কালো দেখবে তার প্রমাণ কি? তারা হয়তো কালো রঙ দেখতেই পায়না।", ভাগ্নে বললো।


ভাগ্নের প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে আমি বললাম, "আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহপাক কত সুন্দর করে আমাদের চোখে 'রড', 'কোন' সেট করে দিয়েছেন। কোন মানুষের পক্ষে কি চোখে 'রড' সেট করা সম্ভব? সকল প্রশংসা মহান আল্লাহপাকের। শোন ভাগ্নে, কুকুরকে না খাইয়ে, মানুষকে খাওয়া। মানুষ হল গিয়ে আশরাফুল মাখলুকাত। কত মানুষ না খেয়ে থাকে। তাদেরকে খেতে দে। এতে অধিক সওয়াব হবে।"


এই কথা শুনে ভাগ্নে মাছের কাটা, মুরগীর ঠ্যাং, চামড়া দিয়ে মাখানো ভাত আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, "এই নাও খাও। তুমি তো বললে কুকুরকে না খাওয়ায়, মানুষকে খাওয়াতে। খাও কুকুরের খাবার।"


লজ্জায় অপমানে ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। সৃষ্টির সেরা জীবের এমন অপমান কিছুতেই হজম করতে পারছিনা।


Nafis Sadique Shatil

নাফিস সাদিক শাতিল

মন্তব্যসমূহ