গডের কৃষ্ণগহবর দর্শন


জিব্রিল হন্তদন্ত হইয়া গডকে বলিল, "ডিয়ার লর্ড আমাদের দ্বাদশ মহাবিশ্বে বেশ একটা ঝামেলা বাঁধিয়া গিয়াছে?"


গড সাহেব সুরা পানে ব্যস্ত সময় পার করিতেছিলেন। এহেন গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে তার ব্যত্যয় ঘটানোয় তিনি তার পবিত্র পশ্চাতংশটি কিঞ্চিত নাড়াইয়া ঘুরিয়া বসিলেন। এরপর বিরসবদনে জিব্রিলকে বলিলেন, "কি এমন ঘটিয়াছে যে এই মধ্যরাতে আসিয়া আমার হরিদ্বারে চিৎকার জুড়িতে হইবে?"


জিব্রিল থতমত খাইয়া বলিল, "ডিয়ার লর্ড এখন তো কেবল সন্ধ্যা ৭ টা বাজিয়াছে। এখন কি মধ্যরাত্রি?"


লর্ড খ্যাক করিয়া উঠিয়া বলিল, "কখন রাত্রি আর কখন দিবা সেটাকি তোমার কাছ হইতে শিখিতে হইবে? তুমি কি বলিতে আসিয়াছো সেটা বলিয়া দ্রুত এখান হইতে প্রস্থান লও।"


"দু:খিত জনাব। আমার ভুল হইয়াছে। তবে আপনাকে একটা বিষয় না জানাইয়া পারিতেছিনা যে আমাদের দ্বাদশ মহাবিশ্বের মিল্কিওয়ে নামক গ্যালাক্সির সূর্য নামক একটা মধ্যম আকৃতির নক্ষত্রের পৃথিবী নামক একটা গ্রহের বাংলাদেশ নামক একটা দেশে আমাদের মহামান্য আজ্রিল ফেরেশতা দ্বারা সংঘটিত কিছু কর্মের জন্য আমাদের কোম্পানির বদনাম হইতেছে। অনেকেই আপনার উপর বিশ্বাস রাখিতে অপারগতা প্রকাশ করিতেছে। অনেকেই আপনার সাথে স্পন্সরশিপ, পার্টনারশিপ বাতিল করিতে চাইতেছে বলেও শোনা যাইতেছে।"


"তাই নাকি? তো কি করিয়াছে আজ্রিল?", গড জানিতে চাইলেন।


"আর বলিবেন না মহাশয়", জিব্রিল সুযোগ পাইয়া বলিতে শুরু করিল। "আজ্রিলকে আপনি একটি দায়িত্বই দিয়াছেন। সেটিও সে পালন করিতে পদে পদে ব্যর্থ হইতেছে। আমি আপনাকে আগেই বলিয়াছিলাম আজ্রিলকে এই পদ থেকে অব্যহতি দিয়ে আমার পরিচিত এক ফেরেশতাকে তার স্থলাভিষিক্ত করুন। আপনি আমার কথা রাখিলেন না। আমার পরিচিত ফেরেশতাটি এই কর্মে আপনার আজ্রিল থেকে লক্ষ কোটি গুণে বেশি যোগ্য, দক্ষ আর অভিজ্ঞ।"


জিব্রিলকে থামাইয়া দিয়া গড বলিলেন, "তোমার এসব নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ করিয়া তুমি মূল কথায় আসো। আগেও তুমি মাইকেলকে প্রতিস্থাপন করিয়া তার স্থলে একজন নবাগতকে চাকরি দেওয়ার নিমিত্তে বড় অংকের ঘুষ গ্রহণ করিয়াছিলে। তোমার দুর্নীতি ইতোমধ্যে বহুবার প্রমাণিত হইয়াছে।"


"হুজুর, পূর্বের কথা টানিয়া আনিয়া কি লাভ? বর্তমানে কি ঘটিতেছে সেইদিকে আলোকপাত করাই বোধ হয় উত্তম। যা বলিতেছিলাম, ঘটনা হইলো বাংলাদেশ নামক একটা দেশে আজ্রিল জান কবজ করার পরেও কিছু কিছু মানু্‌ষ ফেরত আসিতেছে। এ কেমন জান কবজ? একজন মৃত মানুষ কিভাবে ফিরিয়া আসে? কি পরিমাণ দায়িত্বজ্ঞানহীন হইলে এমন ত্রুটিপূর্ণ কর্ম সম্পাদন করা সম্ভব? এরপরেও আপনি তাকে স্বপদে বহাল রাখিবেন?", জিব্রিল আর্তনাদ করিয়া উঠিলো।


"তুমি শান্ত হও জিব্রিল। আজ্রিলকে সরিয়ে তোমার নিজের লোক নিয়োগের জন্য তুমি হাজার হাজার বৎসর ধরিয়া প্রচেষ্টা চালাইয়া আসিতেছো। এগুলো আমি বিস্মৃত হইনাই। তবুও অভিযোগ যেহেতু আনিয়াছো তদন্ত তো করিতেই হয়। ডাকো আজ্রিলকে। সে এখন কোথায়?"


"আজ্রিল এখন পাপুয়া নিউ গিনিতে এক অশীতিপর বৃদ্ধকে ইহধাম ত্যাগ করাইতেছে। এরপর জাম্বিয়াতে এক বৃদ্ধার জান কবজ করার শিডিউল রহিয়াছে তার।"


"এসব বাদ দিয়ে তাকে দ্রুত আমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে বলো। পরবর্তী এক ঘন্টার সকল মৃতদের আয়ু ৫ বৎসর বৃদ্ধির নির্দেশ দিলাম আমি।", গড বলিলেন।


আজ্রিল প্রতিবাদ করিয়া বলিল, "হুজুর এটাকি সঠিক সিদ্ধান্ত হইলো? কারণ এর ভেতর অনেক মুমিন মুস-ল-মান পুরুষ আছে, যাদের রয়েছে একাধিক সহধর্মিনী। ৫ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর তো তারা সং্খ্যায় ১০ গুণ হইয়া যাইবে। এতে তো পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হইবে।"


"হে পরিবেশবীদের পুত্র! পিতার পূর্বে হন্টন কোন ভালো পূর্বাভাস নয়। তোমাকে যেটা বলেছি শুধু সেটা করে তোমার দায়িত্ব সম্পন্ন করো। পরিবেশ ঠিক রাখার দায়িত্ব পালনের জন্য আমার আলাদা বিভাগ রহিয়াছে। তাদেরকে তাদের কাজ করিতে দাও। দ্রুত আজ্রিলকে আমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে বলো।" 


এমতাবস্থায় দরবারে আজ্রিলের আবির্ভাব ঘটিলো। আজ্রিল কাঁচুমাচু কন্ঠে বলিল, "হুজুর আপনিতো ভালো করিয়াই জানেন আমাকে মাসের শুরুতে তালিকা ধরাইয়া দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী আমি এবং আমার টিম জান কবজ করি। কিভাবে জুলাই আগস্ট মাসে এতো পরিমাণ বাংলাদেশী মৃত হল সেটা তো আমার মস্তিষ্কে আগমন ঘটিতেছে না। এরা তো  মৃত্যু নিয়েও ক্রীড়া করিতেছে মাই লর্ড। আপনি আমাকে অযথাই ভুল বুঝিতেছেন। আপনি আপনার ঐশী গ্রন্থগুলোতে মৃত্যু নিয়ে বারবার পুন:বার তাদের ভেতর ভয়ের সঞ্চার করিয়াও কোন লাভ হয়নি। তারা মৃত্যুকে একটা উপহাসের বিষয় বানাইয়া ফেলিয়াছে। মৃত্যু নিয়েও তারা সবার সহিত প্রতারণার আশ্রয় লহিয়াছে।"


"জিব্রিল অভিযোগ আনিয়াছে তুমি তোমার দায়িত্বে অবহেলা করিয়াছো। তুমি ঠিকমত জান কবজ করোনাই। অতিরিক্ত শীঘ্রভাবে কর্ম সম্পাদন করিতে গিয়া তোমার কর্ম ত্রুটিপূর্ণ রহিয়া গিয়াছে।"


"জিব্রিলের কথা আর কি বলিব? সে আমার পেছনে লাগিয়া রহিয়াছে শত সহস্র বছর ধরিয়া। পেছন বলায় স্মরণে আসিলো কিছুদিন পূর্বে জিব্রিলের পশ্চাৎভাগ লাল দেখিয়াছিলাম। এই ষড়যন্ত্রে সে জড়িত রহিয়াছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখার আবেদন রইলো।"


পশ্চাতের প্রসংগ আসায় গড আবার নড়িয়া চড়িয়া ঠিক হইয়া বলিলেন, "যা ক্ষতি হওয়ার সেটাতো হইয়াই গিয়াছে। এখন আর পুরাতন কথা টানিয়া আনিয়া কি লাভ? মানুষ তোমার উপর আস্থা হারাইয়া ফেলিয়াছে। পারলে এর থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার উপায় বলো।"


"এর উপায় খুবই সহজ হুজুর। সেই চৌদ্দশত বছর আগে আপনি চন্দ্র দ্বিখন্ডন করিয়া সর্বশেষ মুজিযা প্রদর্শন করিয়াছিলেন। এরপর বহুত সময় গড়াইয়াছে। বর্তমানে আরো একবার আপনার সেই ঐন্দ্রজালিক শক্তি প্রদর্শনের সময় আবির্ভূত হইয়াছে। তবে বর্তমান সময়ে এসব চন্দ্র বিভাজন করিতে গেলে প্রচুর সমস্যায় পড়িতে হইবে। বিজ্ঞানের কল্যাণে লোকজন সব জানিয়া বুঝিয়া বসিয়া রহিয়াছে। এছাড়াও চন্দ্রের সহিত পৃথিবীর আহ্নিক গতির সম্পর্ক রহিয়াছে। দিবা-রাত্রি, জোয়ার-ভাটার সম্পর্ক রহিয়াছে। তাই এক্ষণে ওসমস্ত ঝামেলা এড়াইয়া অন্য কোন মুজিযা প্রদর্শন করাই উত্তম হইবে।"


"তাহলে কি করিব? লাঠিকে সাপ বানাইবো?"


"আপনার এসব মুজেজায় মানুষ এখন আর হতবিহবল হইবেনা হুজুর। এগুলো প্রাগৈতিহাসিক মুজেজা। আপনি এক কাজ করিতে পারেন মাদ্রাসা হইতে ব-লা-ৎকা-রের বিলোপ ঘটাইয়া ফেলিতে পারেন। আমি চ্যালেঞ্জ করিয়া বলিতে পারি এর থেকে বড় অত্যাশ্চর্যজনক বিষয় কেহই প্রত্যক্ষ করেনাই।"


একথা শ্রবণ করিয়া মহান গড অত্যন্ত বিমর্ষচিত্তে বলিতে লাগিলেন, "দু:খের কথা কি করে বলি হে আজ্রিল। তুমি যেটা ভাবিয়াছো আমিও সেরকমটা ভাবিয়াই ছদ্মবেশ ধরিয়া মাদ্রাসায় ঢুকিয়াছিলাম। কিন্তু এরপর যা ঘটিয়াছে তাহা তুমি তোমার স্বচর্মচক্ষে অবলোকন না করিলে বিশ্বাস করিবে না। এরপর হইতে আমি না পারি বসিয়া রইতে, না পারি শুইতে। মন মেজাজও এখন আর পূর্বের ন্যায় ভালো বোধ করিনা। দিবস-রজনী সুরা পান করিয়া পশ্চাৎ অংশের বেদনা সংবরণের প্রচেষ্টা চালাই।" একথা বলিয়াই গড ক্রন্দন করিতে করিতে তার পশ্চাতের কাপড়খানা উঠাইয়া তার মহান গুহ্যদ্বার উন্মুক্ত করিলেন।


হতবিহবল আজ্রিল ফ্যালফ্যাল নয়নে গডের কৃষ্ণগহবরের দিকে তাকাইয়া রইলেন।


Nafis Sadique Shatil

নাফিস সাদিক শাতিল

মন্তব্যসমূহ