ভাগ্নে আর আমি গিয়েছি বিয়ের দাওয়াতে। খাওয়া দাওয়া শেষে ভাগ্নেকে বললাম, "দেখ তোরা নাস্তিকরা তো ইসলামে নারীর সম্মান বিষয়টা নিয়ে নানান কথা বলিস। এই যে স্ত্রীদের মোহরানার বিষয়টা তো তোদের চোখেই পড়েনা। আর কোন ধর্মে মেয়েদের দেনমোহরের বিষয়টা চালু আছে? একটাও দেখাতে পারবি?"
ভাগ্নে খুব বিষ্মিত হয়ে বললো, "মামা, ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বেই আরব পৌত্তলিকদের ভেতর বিয়ের সময় মোহরের ব্যাপারটা প্রচলিত ছিলো। ইবনে হিশামের সীরাত গ্রন্থ থেকে জানা যায় নবী(সাঃ) এর সাথে খাদিজার বিয়ের সময় নবী(সাঃ) মোহরানা বাবদ ২০ টি উট প্রদান করেন। [১] বলাই বাহুল্য নবীজী(সাঃ) খাদিজাকে বিয়ে করেছিলেন তার নব্যুয়ত প্রাপ্তির অনেক আগে। সুতরাং এই বিষয়টা স্পষ্ট যে, সে সময়ের ইহুদি-খ্রিষ্টান-পৌত্তলিক প্রধান আরব অঞ্চলে অনেক আগে থেকেই মোহরানার ব্যাপারটা চালু ছিলো।"
"আচ্ছা সেটা নাহয় মানলাম। কিন্তু ইসলামে তো দেনমোহরকে ওয়াজিব করা হয়েছে। অর্থাৎ, সব মুসলিম পুরুষগণ মোহর দিতে বাধ্য। এটা তো একজন নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা তো স্বীকার করবি? নাকি এটা নিয়েও তোদের চুলকানি আছে?", আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম।
"আসলে দেনমোহর বিষয়টা সম্পর্কে তোমার ধারণার অভাব রয়েছে। তুমি যদি বাজারে কোন জিনিস কিনতে যাও, তাহলে তোমাকে অর্থ পরিশোধ করতে হয়না? অর্থ পরিশোধ করে পণ্য বুঝে নেওয়াটাই তো নিয়ম। তাইনা? নাকি পণ্যের বিনিময়ে অর্থ প্রদান করাটা ক্রেতার মহানুভবতা? উদারতা?", ভাগ্নে বললো।
"ছি ছি ছি। তোরা নাস্তিকরা যে নারীদেরকে ভোগ্যপণ্য মনে করিস সেটা তোর কথায়ই স্পষ্ট হয়ে গেলো।"
"কিন্তু সহিহ হাদিসে তো আছে 'দুনিয়ার উত্তম উপভোগ্য উপকরণ পুণ্যবতী নারী' [২] আর আয়িশা(রাঃ) বর্ণিত হাদিসে আছে 'স্ত্রীর মোহর দিতে হবে তার (লজ্জাস্থান) উপভোগ (হালাল) করার জন্যে'। [৩] আরেকটা সহিহ হাদিসে আছে, 'তোমার দেওয়া সস্পদ(মোহরানা) ঐ বস্তুর বিনিময়ে বলে গণ্য হবে যা দ্বারা তুমি তার লজ্জাস্থান হালাল করেছ'। [৪] অর্থাৎ, স্বামী স্ত্রীর যৌনাঙ্গ উপভোগ করার বিনিময়ে তাকে প্রদত্ত নগদ বা বাকি অর্থ সম্পদকে মোহর বলে। [৫]" ভাগ্নে বললো।
"মানে? তুই কি বলতে চাচ্ছিস এই দেনমোহর বিষয়টা নারীর যৌনাঙ্গের ক্রয়মূল্য? এটা নারীর জন্য সম্মানের বিষয় নয়?"
"অবশ্যই। ব্যাপক সম্মানের। তোমার যৌনাঙ্গ যদি তোমার স্ত্রী নগদ অর্থের বদলে ক্রয় করে নেয়- বিষয়টা তোমার জন্য যতটা সম্মানের, তেমনি একজন নারীর জন্যও মোহরানা ঠিক ততটাই সম্মানের", ভাগ্নে উত্তর দিলো।
ভাগ্নের উত্তর শুনে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়লাম। আমার যৌনাঙ্গ আরেকজন টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে যখন খুশি যেভাবে খুশি ব্যবহার করছে- ভাবতেই ভয়ে চোখ মুখ শুকিয়ে গেলো। আমার ভীত চেহারা লুকিয়ে ভাগ্নের সামনে সেই পুরানো মুখস্থ বুলি আওড়াতে লাগলাম, "এসব তুই বুঝবিনা। প্রেক্ষাপট জানতে হবে। পরিস্থিতি বুঝতে হবে। সেসময় আরব সমাজে নারীদের............."
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন