পাঞ্জাবীর পকেট থেকে টুক করে খেজুর বের করে মুখে ঢোকালো মাসুদ রানা। অবাক দৃষ্টিতে দেখছে সোহানা। এই অপারেশনে সহকারী হিসেবে তার সাথে আছে সোহানা। রুপালী হিজাব আর সাদা বোরকায় সোহানাকে জান্নাতের হুরীর মতই লাগছে।
তাদেরকে তোলা হয়েছে একটি সাদা ল্যান্ড রোভারে। সম্ভবত ১৯৯৮ মডেল। অন্ধকারের বুক চিরে প্রবল গতিতে এগিয়ে চলেছে শক্তিশালী যানটি। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো রানা। পুর্ণিমা রাত আর মেঘমুক্ত আকাশ হওয়ায় নবীর হাতের ইশারায় দ্বিখন্ডিত হয়ে আবার জোড়া লেগে যাওয়া চাঁদের আলোয় চারিদিক ঝকঝক করছে। ১০০ হাত দূরেও স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। "এটাই তো চেয়েছিলাম", স্বগোক্তি করলো রানা। চিরশত্রু কবির চৌধুরীর জালে ইচ্ছাকৃতভাবে ধরা দিয়েছে মাসুদ রানা। এটা তাদের পরিকল্পনারই অংশ। বুদ্ধিটা রানার বন্ধু সোহেলের। হেডকোয়ার্টারে বসা সোহেলের সাথে নিয়মিতই যোগাযোগ হচ্ছে রানার। তাদের পরিকল্পনা জানে বস রাহাত খান। তবে এই পরিস্থিতিতে রানার মনে হচ্ছে তারা বেশ ভালোভাবেই ফেঁসে গেছে।
পকেট থেকে আরো দুটো খেজুর বের করে সোহানার দিকে এগিয়ে দিলো রানা। "বিসমিল্লাহ বলে খেয়ে নাও" ফিসফিস করে বলল সে। শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার আগে পকেটে করে আজওয়া খেজুর নিয়ে বের হয় রানা। সহিহ হাদিসে আছে, সাতটি আজওয়া খেজুর খেলে সেদিন কোন বিষ বা জাদু তার ক্ষতি করতে পারবেনা। কাফের নাস্তিক বিজ্ঞানী কবির চৌধুরী যদি রানার দেহে তার আবিষ্কৃত নতুন কোন বিষ প্রয়োগ করে মে/রে ফেলতে চায়, তাহলে যেন কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য সাতটি খেজুর খেয়ে নিচ্ছে সে। সাথে আরো রয়েছে মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ওষুধ কালোজিরা।
পায়জামার ফিতাটা টাইট করে বেঁধে নিলো রানা। হাতের তসবী টা পকেটে ঢুকিয়ে পায়জামাটা গুটিয়ে টাখনুর উপরে তুলে নিল। সে খুব ভালো করে জানে পুরুষের টাখনুতে সেক্স হরমোন থাকে। পায়জামা গোটাতে দেখে মুচকি হাসলো সোহানা। মনে মনে ধন্যবাদ দিল ইব্রাহিম ও তারেক হুজুরকে। যাদের ওয়াজ শুনে তারা এসব বিজ্ঞান শিখেছে।
হঠাৎ ব্রেক কষলো গাড়িটি। চিন্তায় ছেদ পড়লো সোহানার। হাত থেকে খেজুর পড়ে গেল রানার। চিন্তায় পড়ে গেল সে। সাতটি আজওয়া খেজুর না খেলে বাঁচবে কিভাবে সে? হঠাৎ তার ঠোটের কোণে এক চিলতে হাসি দেখা গেল। ভুলেই গিয়েছিল ব্যাপারটা সে। বাংলাদেশ সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্সের সকল স্পাইদের পেছনের দাঁতের নিচে সায়ানাইড বিষ থাকতো। মেজর জেনারেল রাহাত খানকে বলে সায়ানাইড ফেলে দিয়ে সেখানে আজওয়া খেজুর আর কালোজিরার পেস্ট ভরে নিয়েছে রানা। রাহাত খান প্রথমে রাজি না হলেও একসাথে নামাজ শেষ করে কয়েকটি হাদিস ফতোয়া শুনিয়ে তাকে রাজি করিয়েছে সে।
সায়ানাইড খেয়ে আ/ত্ম হ/ত্যা করা গোনাহ। এই চিন্তা থেকেই এটি করেছে সে। তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী অতি পছন্দের ওয়ালথার পিপিকে সেমি অটোমেটিক পিস্তলটিও জমা দিয়ে তলোয়ার নিয়েছে সে। "তলোয়ারের ছায়ার নিচে জান্নাত" এই হাদিসটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে সে। তার তরবারির নাম দিয়েছে "জুলফিকার"। তার জীবনের দ্বিতীয় আদর্শ হযরত আলীর তরবারির নামে নামকরণ করেছে সে।
দোয়া দুরুদ পড়ার দিকে মনোযোগ দিল রানা। দূরের মসজিদে ফজরের আজান শুনতে পেল সে। মসজিদে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করার জন্য মন কেঁদে উঠলো রানার। তাহাজ্জুত আদায় করতে না পারার কষ্টে বুকটা হুহু করে উঠলো ওর। ঘন কালো লম্বা সুন্নতি দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে চিন্তার সাগরে ডুব দিল রানা। আগামী কয়েক ঘন্টায় কি হতে চলেছে সেটা ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়ল সে। হঠাৎ শ্বাস নিতে কষ্ট হতে লাগলো রানার। বুঝতে পারলো তাদেরকে পাহাড়ী রাস্তা বেয়ে উপরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এক মুহূর্তের জন্য অজানা আতঙ্ক গ্রাস করল রানাকে। পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিল সে। তার মনে পড়ল মাছের পেটে আটকে পড়া ইউনুস নবী কথা। নিজের অজান্তেই মুখ ফুটে বেরিয়ে এল বিপদ থেকে উদ্ধারের দোয়া, "লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্জালিমিন।"
Nafis Sadique Shatil
নাফিস সাদিক শাতিল
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন