ভাগ্নেকে বললাম, "দেখ তোরা তো এসব মানিস না। কিন্তু ইসলাম হল পরিপূর্ণ জীবনবিধান। এই যে বাংলাদেশে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে এর জন্যও ইসলামে রয়েছে খুবই সহজ সমাধান। আমাদের নবী(সা:) বৃষ্টি বন্ধের জন্য একটি দোয়া পাঠ করতেন। ঐ দোয়াটা আমরা যদি ঠিকঠাক আমল করতে পারি, ইনশাআল্লাহ দেশে কোন বন্যা থাকবেনা।"
ভাগ্নে বিরস মুখে বললো, "আচ্ছা সেই দোয়াটা কি? একটু তর্জমা করে বলতো।"
ভাগ্নেকে দমিয়ে দিতে পেরে খুশি হয়ে বললাম, "শিখে রাখ। বিপদে আপদে কাজে দিবে।" এই বলে আমি দোয়ার অনুবাদ বলতে লাগলাম, "হে আল্লাহ! আমাদের চারপাশে বৃষ্টি বর্ষণ করুন, আমাদের ওপর নয়। হে আল্লাহ! পর্বতমালা, পাহাড়ের ঢাল, উপত্যকা এবং গাছপালার উপর বর্ষণ করুন।"
"আচ্ছা মামা আমার কয়েকটা প্রশ্ন আছে।" ভাগ্নে কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো। "আচ্ছা আমাকে এইটা বলো পাহাড় পর্বত কিংবা উপত্যকার পানির সর্বশেষ গন্তব্য কোথায়?"
"আমি যতটুকু জানি এসব পানি নদীনালা বেয়ে সমুদ্রে চলে যায়।" বললাম আমি।
"তাহলে আমাদের উপরে যদি বৃষ্টি না হয়ে, আশেপাশের জেলাগুলোতে হয়, কিংবা আশেপাশের পাহাড়ে, বনভূমিতে কিংবা পাহাড়ি উপত্যকায়ও হয় সেক্ষেত্রেও তো ভুক্তভোগী আমাদেরই হতে হবে। তাইনা? এছাড়াও পাহাড়ি এলাকায়ও প্রচুর মানুষ থাকে, বিভিন্ন প্রাণী থাকে, বনভূমিতে অনেক ধরনের পাখি প্রাণী থাকে, তাদের কি হবে? প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ধ্বস ঘটে, অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে, পাহাড়ি হড়কা বানে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির রেকর্ড আছে। বনে জঙ্গলেও অনেক পশুপাখি থাকে। তাদের কি হবে? তুমি কিভাবে স্বার্থপরের মত এরকম চাওয়া পোষণ করছো?"
"আসলে তোকে প্রেক্ষাপট বুঝতে হবে, পরিস্থিতি জানতে হবে।"
"আরো রাখো তোমার প্রেক্ষাপট পরিস্থিতি। স্বয়ং সৌদি আরবে কিছুদিন আগে বন্যায় এত পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেলো। আফগানি স্তানে বন্যা হলো। ওরা কি এই দোয়া জানতো না? তারা এই আমল করে বন্যা ঠেকাতে পারলোনা কেন? নাকি তাদের থেকেও তোমাদের ঈমানে জোর বেশি? আর এই দুনিয়ার কোন কিছুই তো আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া হয়না। সব কিছুই ৫০ হাজার বছর পূর্বে তাকদীরে লিপিবদ্ধ। কোথা থেকে কতটুকু পানি আসবে, বন্যায় কেমন ক্ষয়ক্ষতি হবে সবই তো লিপিবদ্ধ আছে। তোমার কি মনে হয় তোমার আমার কথায় অর্ধলক্ষ বছর আগের লেখা তাকদির পালটে যাবে?"
কথাগুলো বলে ভাগ্নে দ্রুত উঠে চলে গেলো। ভাগ্নের এসব নাস্তি:কমার্কা যুক্তি শুনে বসে থাকলে হবেনা। দেশের জন্য কিছু করতে হবে। তাই বন্যা থেকে দেশকে রক্ষার্থে আমি আবার ঘরে বসে দোয়া পড়ায় মনোযোগী হলাম।
নাফিস সাদিক শাতিল
Nafis Sadique Shatil
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন