ভাগ্নেকে বললাম, "দেখ সামান্য একটা ঘড়িরও স্রষ্টা আছে। আর মানুষ কত জটিল একটা প্রাণী। এত জটিল সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা নাই- তোরা এটা কোন যুক্তিতে বলিস? আল্লাহ আমাদের এই দুনিয়ায় পাঠিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছেন। আবার তার কাছে ফিরে যেতে হবে। হিসাব নিকাশ দিতে হবে।"
ভাগ্নে বললো, "মামা তুমি কি জানো, কয়েক মাস আগে সোমালিয়ান জল-দস্যুরা একটি বাংলাদেশী জাহাজের দখল নেয়? জাহাজের ২৩ জন নাবিকের সকলকেই তারা জিম্মি করে। জাহাজটির নাম ছিলো 'এমভি আব্দুল্লাহ'। 'আব্দুল্লাহ' শব্দের অর্থ আল্লাহর দাস। অর্থাৎ, এই জাহাজের বাংলা নাম দাঁড়ায় 'এমভি আল্লাহর দাস'। অর্থাৎ, জাহাজটিকে একটি মুসলিম জাহাজ বললে ভুল হবেনা। মুসলিম দেশ, মুসলিম পোশাক, মুসলিম স্কুল থাকতে পারলে মুসলিম জাহাজ থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়। নাকি?"
আমি চুপ করে ভাগ্নের কথা শুনছিলাম। আমাকে চুপ থাকতে দেখে ভাগ্নে আবার বলা শুরু করলো, "যাই হোক 'মুস-লিম জলদস্যু'রা এই 'মুস-লিম জাহাজ' 'আল্লাহর বান্দা'কে হাইজ্যাক করে জাহাজে থাকা 'মুস-লিম নাবিক'দের জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবী করে। জাহাজের মুস-লিম নাবিকরা বাঁচার জন্য প্রাণপণে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকেন, আ-ল্লাহর দরবারে কাকুতি মিনতি করতে থাকেন। কারণ কি? যাদের তাকদিরে আল্লাহ নিজেই লিখে রেখেছেন দস্যুতা, সেই আল্লাহর ইচ্ছায়ই তো তারা ডা-কা-তি করছে, তাদের রিজিক আল্লাহ নিজে লিখে রেখেছেন এসব স-ন্ত্রা-সী কার্যক্রমের মাধ্যমে। তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য, সেই একই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে কি লাভ?"
আমি বললাম, "আরে বোকা। এটাই তো আল্লাহর পরীক্ষা। আল্লাহ এখানে জলদস্যু আর নাবিক দুই পক্ষেরই পরীক্ষা নিচ্ছেন।"
ভাগ্নে মাথা নেড়ে বললো, "উহু মামা। আমার মনে হয় ঘটনা উল্টো। আসলে এখানে আ-ল্লা-হরই পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। আমি আরেকটু ভালোভাবে ব্যাখ্যা করি- পাকিস্তানে যখন শিয়া কিংবা আহমাদিয়া মসজিদে সুন্নীরা হা-ম-লা চালায়, তখন দুই পক্ষই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। ইয়েমেনের হুতিদের উপর সৌদি জোট যখন হা-ম-লা চালায় তখন দুই পক্ষই আল্লাহর কাছে সাহায্য চায়। যখন ইরান-ইরাক যুদ্ধ বাঁধে তখন দুই পক্ষই নিজেদের আল্লাহর দলের লোক ভেবে সাহায্য চায়। বাংলাদেশে যখন তৌহিদী জনতা মাজার ভাঙে, তখন মাজারপন্থি আর মাজার-ভাঙা-পন্থী উভয়েই আল্লাহর কাছেই সাহায্য চায়। এখানে তো আল্লাহই আ-ল্লা-হর প্রতিপক্ষ তাইনা? এসমস্ত মুহুর্তে আল্লাহ কাকে সাহায্য করবেন?
আমার মনে হয় এটা আল্লাহর জন্য পরীক্ষা। আল্লাহ যেমন তার নিজের সৃষ্টি মানুষকে বিভিন্ন জটিল পরিস্থিতিতে ফেলে পরীক্ষা নেন, তেমনি আল্লা-হর সৃষ্টিকর্তাও আল্লাহকে জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন করে তার পরীক্ষা নেন।"
"নাউজুবিল্লাহ মিন জালেক। আল্লাহ মহান সৃষ্টিকর্তা। তার আবার স্রষ্টা থাকে কিভাবে? এখনই তওবা কর।", আমি বললাম।
" সেটা তো তুমিই ভালো জানো। তুমিই তো একটু আগে এই যুক্তি দিলে। সামান্য ঘড়ির যদি স্রষ্টা থাকতে পারে, মানুষের মত জটিল সৃষ্টির যদি স্রষ্টা থাকে, তাহলে আল্লাহর কেন স্রষ্টা থাকবেনা? উনি তো মানুষের থেকেও আরো অনেক অনেক জটিলতর সৃষ্টি। তাইনা?"
এই না-স্তি-ক ভাগ্নের সাথে অহেতুক তর্ক করে কোন লাভ নেই বুঝতে পেরে আমি নামাজের কথা বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলাম।
Nafis Sadique Shatil
নাফিস সাদিক শাতিল

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন